তিতাস নিউজ ডেস্কঃ
মাস্টারমশাই রিটায়ার করলেন ২০০৪ সালে।
প্রায় ৩৫-৪০ বছর এই স্কুলে পড়িয়েছেন। নিজে খুব ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন, ভালো রেজাল্টও করেছিলেন- কিন্তু পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রী নেওয়ার পরেই নিজের গ্রামে চলে এসেছিলেন সার্ভিস দেবেন বলে। কিন্তু ষাট বছর বয়স হয়ে গেলে তো আর চাকরি করা যায় না, কাজেই তাকে রিটায়ার্ড করতেই হলো। মনে মনে হয়তো ভেবেছিলেন যে এক্সটেনশন পেলেও পেতে পারেন, কিন্তু সেটা যে কোন কারণেই হোক হয়নি..।
রিটায়ার্ড লাইফের প্রথম দিন ঘুম থেকে উঠলেন- খুবই বিরস একটা অনুভূতি হচ্ছিল । এতদিন ব্যস্ত ছিলেন, কী করে যে এই সময়টা কাটাবেন। তো বাইরে বেরিয়ে দেখলেন তিনটি আদিবাসী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের একজন জিজ্ঞাসা করল- আপনি কি সেই মাস্টারমশাই যিনি কাল রিটায়ার করেছেন?
উত্তর এলো- হ্যাঁ, কিন্তু তোমরা কারা? কী চাও?
আমরা অমুক জায়গা থেকে এসেছি, পড়াশোনা করতে চাই কিন্তু একেবারেই সুযোগ পাই না- হাতজোড় করে মেয়ে তিনটি বললো- আপনি যদি আমাদের একটু পড়ান।
মাস্টারমশাই একটু দুষ্টু হাসি হেসে বললেন- আমি কিন্তু ফ্রিতে পড়াবো না, আমাকে মাইনে দিতে হবে। পারবে তো?
একটি মেয়ে বলল- আমরা খুব গরীব, তবু বলুন, কত নেবেন?
আমার সারা বছরের মাইনে এক টাকা আর চারখানা চকোলেট…।
একটু বেলা হলে মাস্টার মশাই তার স্কুলে গেলেন, গিয়ে বললেন- আমি এই তিনটি মেয়েকে পড়াবো, আমাকে একটু জায়গা দেবে? আমাকে মাইনে পত্র দিতে হবে না।
স্কুল কিন্তু রাজি হলো না ! এরকম আবার হয় নাকি? এখানে হবে না, আপনি অন্য জায়গা দেখুন।
খুবই অবাক হলেন, কিন্তু হতোদ্যম হলেন না। মাস্টার মশাই বললেন- ঠিক আছে, কাল থেকে তোরা আমার কাছে পড়তে আসবি, আমি আমার বাড়ির বারান্দাতেই পড়াবো।
পরের দিন থেকে মাস্টারমশাইয়ের কাজ হল সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গ্রামে এক চক্কর মেরে আসা ,তারপর ছাত্র-ছাত্রী পড়ানো ।
তারপর প্রায় ১৮ বছর কেটে গেছে..
মাস্টার মশায়ের সেই স্কুল – সেখানে আজ ৩০০০ ছাত্র- ছাত্রী পড়ে! মাস্টার মশাই এখনো কর্মক্ষম, এখনো নিজে ছাত্রছাত্রীদের পড়ান। গত বছর তার সামান্য স্বীকৃতি হিসেবে সরকার বাহাদুর তাকে পদ্মশ্রী দিয়ে নিজেই সম্মানিত হয়েছেন। তিনি সুজিত চট্টোপাধ্যায়।
বাসস্থান পূর্ব বর্ধমান