জহির শিকদার: চলতি বছরের জুন মাসেই আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হবে এবং সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে এটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
বুধবার (১৭ মে) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার বাংলাদেশ অংশের মনিয়ন্দ ইউনিয়নের শিবনগর শূন্যরেখায় রেলপথের কাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন আরো বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আখাউড়া-আগরলা রেলপথের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। রেলে চলাচলের জন্য ট্রায়াল রান শেষে মালবাহী ট্রেন চালানো হবে। সিগনালিং ব্যবস্থা হবে, যাতে কোনো ত্রুটি না থাকে। এই কাজগুলো শেষ হলে প্রস্তাব যাবে। সেপ্টেম্বরেই রেলপথ খুলে দেয়া হবে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানিকভাবে এই রেলপথ উদ্ধোধন করবেন।
রেলমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশের জন্য আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন সংযোগটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ লাইনটি চালু হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। পাশাপাশি স্বল্প সময়ে ও কম খরচে মানুষ সহজে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারবে।
আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই উদ্বোধন হবে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ।
এ সময় তিনি বলেন, এই রেলপথ চালু হলে আমাদের দুই দেশের জনগণ উপকৃত হবেন। আগামী জুন মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে যে কোনো প্রকল্পেই একটি ডিফেক্ট লাইএবিলিটি পিরিয়ড (ত্রুটির দায় সময়কাল) থাকে। এখন মে মাস চলছে। আগামী মাসের মধ্যে শেষ হওয়ার জন্য নির্ধারিত আছে। আশা করছি এই বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করতে পারব।
রেলমন্ত্রী বলেন, অনেক লাইন বসে গেছে, এ বছরের আগামী জুনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। স্লিপার বসানো হয়েছে। কিছু কিছু কাজ বাকি আছে। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে তিন কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়েছে। মালামাল সবে এসে গেছে। বাকি চার কিলোমিটার রেললাইন বসানো হবে। এই রেলপথ চালু হলে আরেকটি দ্বার খুলবে। আমাদের যে ব্যবসা বাণিজ্য আছে মালামাল সব ট্রাক দিয়ে আসে। ট্রেন হলে পরিবহনের ক্ষেত্রে মূল্যটা অনেক কমে যাবে। এর সুবিধাটা দুই দেশের জনগণ পাবে।
তিনি বলেন, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ। তবে ঢাকা থেকে যে ট্রেন আসবে, তা মিটার গেজ।কিন্তু রেলের পরিকল্পনানুসারে সমস্ত রেল ব্যবস্থাকে ব্রড গেজে রূপান্তর করা হবে। ধীরে ধীরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ ব্রড গেজে রূপান্তর করা হবে। আপাতত মিটার গেজ ট্রেন দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। ভবিষ্যতে ব্রড গেজে রূপান্তর করা হবে। ভারতের দিক থেকে তাঁরা রেল ব্যবস্থাকে ব্রড গেজে রূপান্তর করেছে। আপাতত আরগতলা পর্যন্ত মিটার গেজে ট্রেন চলবে যদি এটা (আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ) চালু হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্রড গেজে চলার সুযোগ নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অংশটা ব্রড গেজে রূপান্তর করতে না পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত সরাসরি ব্রড গেজে যাওয়ার সুযোগটা নেই। যতদূর পর্যন্ত আমাদের অংশে মিটার গেজে যাবে তারপরে হলো ব্রড গেজ। তবে ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত যে ট্রেন যায়, সেটি ব্রড গেজ।
তিনি আরও বলেন, লাকসাম থেকে চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেলপথের দোহাজারী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ হবে। এই পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের কাজগুলো চলছে। অল্প দিনের মধ্যে টঙ্গী থেকে আখাউড়া পর্যন্ত আমরা ব্রড গেজ অর্থাৎ ডুয়েল গেজ রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু করতে পারব।
রেলমন্ত্রী বলেন, রেলের যে পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আরও ৪-৫টি নতুন ট্রেন দেয়া হবে। আগামী জুলাই মাসে আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন রেল সম্পূর্ণ হবে। অর্থাৎ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডাবল লাইন হয়ে যাচ্ছে। ডাবল লাইন হয়ে গেলে নতুন যে মিটার গেজ কোচ এসেছে, সেগুলো সংযুক্ত করে বেশ কয়েকটি নতুন ট্রেন চালু করব।
এসময় রেলমন্ত্রীর সঙ্গে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক (বাংলাদেশ অংশ) মো. আবু জাফর মিয়া. প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেকসমেকো রেল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কান্ট্রি ডিরেক্টর শরৎ শর্মা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক সার্বিক মো. রুহুল আমিন, আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা উপস্থিত ছিলেন।