৩ জুন (তিতাস নিউজ): পঞ্চম মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার মাত্র চার দিনের মাথায় পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা- ফিফার সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার।
মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জুরিখে এক সংবাদ সম্মেলনে ফুটবল-বিশ্বকে হতভম্ব করে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এর মাধ্যমে দীর্ঘ ১৭ বছর পর ফিফায় ব্ল্যাটার-যুগের অবসান ঘটল।
গত শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জুরিখে সভাপতি নির্বাচনের আগে দেয়া ভাষণে ফিফাকে দুর্নীতিমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছিলেন ৭৯ বছর বয়সী ব্ল্যাটার। অথচ চার দিন পরই এই সুইসের কণ্ঠে ভিন্ন সুর, ‘কলঙ্কিত ফিফার সম্পূর্ণ পুনর্গঠন প্রয়োজন। সভাপতি পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আমি এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছিলাম। নির্বাচন দেখে আমার মনে হয়নি বিশ্ব ফুটবলের প্রত্যেকেই আমাকে সমর্থন করছে।’
তিনি বলেন, ‘ফিফা প্রধান আর আমার জীবনের ৪০টা বছর ফিফায় কাটানো সময়টা নিয়ে আমি গভীরভাবে ভেবেছি। ফিফাকে আমি যেকোনো কিছুর চাইতে বেশি ভালোবাসি। আমি এর ভালোই চাই। ফুটবলের ভালোর জন্যই আমি আরেক মেয়াদে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু সবাই আমাকে সমর্থন দেয়নি।’
ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থেই সরে দাঁড়াচ্ছেন উল্লেখ করে ব্ল্যাটার বলেন, ‘ফিফার স্বার্থই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সংগঠন হিসেবে ফিফা এবং বিশ্বজুড়ে ফুটবলই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
গত সপ্তাহে ফিফা নির্বাচনের ঠিক দুদিন আগে সংস্থাটির সাত কর্মকর্তাকে জুরিখের একটি হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে ছিলেন ফিফার দুজন সহ-সভাপতিও। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের অনুরোধে সুইস পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করেছিল। সাড়ে তিন বছরেও বেশি সময় ধরে এফবিআই’র তদন্তে উঠে আসে ফিফার দুর্নীতির নানা চিত্র। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করে, ফিফার শীর্ষ কর্মকর্তারা কমপক্ষে ১৫ কোটি ডলারের ঘুষ লেনদেন করেছেন গত দুই দশকের বেশি সময়ে। স্পনসর, সম্প্রচার স্বত্ব এবং বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব দেয়ার বিনিময়ে এই ঘুষের লেনদেন হয়।
ফিফার ২২ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি আছে। এই কমিটির সদস্যদের হাতে অসীম ক্ষমতা। এরাই নির্ধারণ করেন কোন দেশ বিশ্বকাপ আয়োজন করবে। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পেতে ১ কোটি ডলার ঘুষ দিয়েছিল বলেও খবর প্রকাশিত হয়। তদন্ত চলছে কাতার ও রাশিয়া বিশ্বকাপ বরাদ্দ নিয়েও।
এসব অভিযোগের মধ্যেও আরেক দফা ফিফা সভাপতি নির্বাচিত হন ব্ল্যাটার। মূলত তাঁর ‘ভোট ব্যাংক’ বলে পরিচিত উন্নয়নশীল দেশের ভোটেই এবারও নির্বাচনী বৈতরণি পার হন তিনি। কিন্তু ফুটবলের সবচেয়ে শক্তিশালী মহাদেশ ইউরোপ ব্ল্যাটারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
গতকাল ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট খবর প্রকাশ করে, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ বয়কট করতে চলেছে উয়েফা। এর বদলে ইউরোপ নিজেরাই বিকল্প বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারে। সেই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোকেও। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করেন ব্ল্যাটার।
এদিকে, ব্ল্যাটারের এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর জর্ডানের একজন শীর্ষ ফুটবল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রিন্স আলী বিন আল হুসেইন পুরোপুরি প্রস্তুত। গত শুক্রবারের নির্বাচনে ব্ল্যাটারের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জর্ডানের প্রিন্স আলী। ফিফা সভাপতি হওয়ার জন্য কোনো প্রার্থীকে ২০৯টি ভোটের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ১৪০ ভোট পেতে হয়। নির্বাচনে প্রথম দফায় ব্ল্যাটার ১৩৩ আর প্রিন্স আলী পান ৭৩ ভোট। বাকি তিন ভোট বাতিল হয়ে যায়।
নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়া প্রার্থী নির্বাচিত হবেন। তবে তার আর প্রয়োজন পড়েনি। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের আগে সরে দাঁড়ান প্রিন্স আলী। তাই আরো চার বছরের জন্য ফিফা সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে যান ব্ল্যাটার। তবে চার বছর নয়, চার দিন পরই শেষ হয়ে গেল ব্ল্যাটার-যুগের।